Description
Sri Lanka coconut tree
শ্রীলংকান নারকেল রোপণ ও পরিচর্যা
শ্রীলংকান নারকেল মূলত শ্রীলংকার একটি উন্নত জাতের নারকেল, যা স্বাদ, তেল উৎপাদন এবং পুষ্টিগুণে অন্যান্য সাধারণ নারকেল প্রজাতির চেয়ে উন্নত। এই নারকেল গাছের উচ্চতা তুলনামূলক কম হলেও ফলন বেশি হয় এবং এটি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে।
শ্রীলংকান নারকেল চাষের উপযুক্ত পরিবেশ
১. জলবায়ু ও তাপমাত্রা
- গ্রীষ্মপ্রধান জলবায়ুতে ভালো জন্মায়।
- ২৫-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা নারকেল চাষের জন্য আদর্শ।
- প্রচুর সূর্যালোক ও মাঝারি আর্দ্রতা প্রয়োজন।
- উপকূলীয় অঞ্চল এবং উষ্ণ-আর্দ্র এলাকায় ভালো ফলন হয়।
২. মাটির ধরন
- দোআঁশ বা বেলে-দোআঁশ মাটি নারকেল চাষের জন্য উপযুক্ত।
- মাটির pH ৫.৫-৭.৫ হলে ভালো ফলন হয়।
- পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ভালো থাকতে হবে, কারণ অতিরিক্ত পানি জমে থাকলে গাছের শিকড় পচে যেতে পারে।
শ্রীলংকান নারকেল রোপণের নিয়ম
১. চারা বা বীজ নির্বাচন
- সুস্থ ও পরিপক্ব নারকেল বীজ নির্বাচন করতে হবে।
- বীজ থেকে চারা তৈরি করতে হলে ৩-৫ মাস বয়সী নারকেল ব্যবহার করতে হবে।
- নারকেলের খোসা বাদ দিয়ে বীজ প্রস্তুত করলে দ্রুত অঙ্কুরোদগম হয়।
২. চারা রোপণের সময়
- বর্ষার শুরু (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বা বসন্তকাল (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) নারকেল রোপণের উপযুক্ত সময়।
- শুকনো মৌসুমে রোপণ করলে নিয়মিত পানি সরবরাহ করতে হবে।
৩. গর্ত তৈরি ও সার প্রয়োগ
- ৩x৩ ফুট গভীর গর্ত খুঁড়ে এর মধ্যে জৈব সার ও উর্বর মাটি মিশিয়ে প্রস্তুত করতে হবে।
- প্রতি গর্তে ৮-১০ কেজি গোবর সার, ২০০ গ্রাম সুপার ফসফেট ও ১০০ গ্রাম পটাশ দিতে হবে।
- চারাগুলো ২০-২৫ ফুট দূরত্বে লাগানো উচিত, যাতে গাছগুলো পর্যাপ্ত জায়গা পায়।
৪. চারা রোপণ পদ্ধতি
- চারা রোপণের পর মাটি চাপা দিয়ে সামান্য উঁচু করে দিতে হবে, যাতে পানি জমে না থাকে।
- প্রথম ৬ মাস গাছকে শক্তভাবে মাটির সঙ্গে ধরে রাখতে বাঁশ বা খুঁটি দিয়ে সাপোর্ট দেওয়া যেতে পারে।
- রোপণের পরপরই ভালোভাবে পানি দিতে হবে।
শ্রীলংকান নারকেল গাছের পরিচর্যা
১. সেচ ব্যবস্থা
- গ্রীষ্মকালে প্রতি সপ্তাহে ২-৩ বার পানি দিতে হবে।
- শীত ও বর্ষাকালে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হলে অতিরিক্ত পানি দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
- মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতে মালচিং করা যেতে পারে।
২. সার প্রয়োগ
- প্রথম বছর প্রতি ৩ মাস অন্তর গোবর সার ও জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।
- দ্বিতীয় বছর থেকে নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশ সমৃদ্ধ রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।
- প্রতি বছর প্রতি গাছের জন্য ১-১.৫ কেজি ইউরিয়া, ১.৫ কেজি সুপার ফসফেট ও ১.৫ কেজি মিউরিয়েট অব পটাশ প্রয়োগ করা ভালো।
- সার প্রয়োগের সময় গাছের গোড়ার কাছ থেকে ২-৩ ফুট দূরে প্রয়োগ করতে হবে।
৩. আগাছা ও মালচিং
- গাছের চারপাশের আগাছা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
- গাছের গোড়ায় শুকনো পাতা, খড় বা কচুরিপানা দিয়ে মালচিং করলে মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখা যায়।
৪. গাছ ছাঁটাই (Pruning)
- পুরনো, শুকনো বা রোগাক্রান্ত পাতাগুলো ছেঁটে ফেলতে হবে।
- গাছের উচ্চতা বেশি হলে নীচের কিছু পাতাও ছেঁটে দেওয়া যেতে পারে, যাতে নতুন কচি পাতা ভালোভাবে গজাতে পারে।
রোগবালাই ও প্রতিকার
১. সাধারণ রোগ
- নারকেল উইভিল (Weevil) ও রেড পাম উইভিল:
- এই পোকা নারকেলের কান্ডের ভেতর ঢুকে ক্ষতি করে।
- প্রতিকার: আক্রান্ত গাছ থেকে উইভিল অপসারণ করে কার্বারিল বা ক্লোরপাইরিফস স্প্রে করতে হবে।
- গগোল (Bud Rot) রোগ:
- পাতার গোড়া পচে গাছ মারা যেতে পারে।
- প্রতিকার: কপার অক্সিক্লোরাইড বা বোর্দো মিশ্রণ ব্যবহার করে স্প্রে করতে হবে।
- পাতা হলুদ হয়ে যাওয়া:
- এটি পুষ্টির ঘাটতির কারণে হতে পারে।
- প্রতিকার: পর্যাপ্ত নাইট্রোজেন, ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ সার ব্যবহার করতে হবে।
২. প্রতিরোধ ব্যবস্থা
- রোগ প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে।
- গাছের গোড়া সবসময় পরিষ্কার ও শুকনো রাখতে হবে।
- রাসায়নিক ও জৈব কীটনাশক প্রয়োগ করে গাছের স্বাস্থ্য ভালো রাখা যায়।
ফল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ
- নারকেল গাছ রোপণের ৩-৪ বছরের মধ্যে ফল আসতে শুরু করে।
- একবার ফুল আসার পর ফল পাকার জন্য ১০-১২ মাস সময় লাগে।
- নারকেল সম্পূর্ণ পাকা হলে তা সংগ্রহ করা ভালো, তবে কচি অবস্থায়ও পানীয় নারকেল হিসেবে সংগ্রহ করা যায়।
- শুকনো নারকেল (Copra) সংগ্রহ করতে হলে পাকার পর ২-৩ সপ্তাহ রোদে শুকাতে হয়।
উপসংহার
শ্রীলংকান নারকেল একটি উচ্চফলনশীল ও দীর্ঘস্থায়ী গাছ, যা উপযুক্ত পরিচর্যা করলে ৫০-৭০ বছর পর্যন্ত ফলন দিতে পারে। বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ অত্যন্ত লাভজনক, কারণ নারকেল থেকে তেল, পানি, কোপরা এবং গাছের কাঠ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করলে এটি একটি টেকসই কৃষি বিনিয়োগ হতে পারে।
Know More Details Just Call- 01861543144
Got Nursery Related Tips and Trikes Please Join Our Facebook Group
Reviews
There are no reviews yet.